৪র্থ পর্ব : আর্থিক শৃঙ্খলা আনবার উপায় - 14 দিনের চ্যালেঞ্জ

আর্থিক শৃঙ্খলা আনবার উপায় মাত্র 14 দিনে - চতুর্থ ভাগ

14 দিনে 14টা গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বিষয় নিয়ে চ্যালেঞ্জ লিখতে গিয়ে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেব সেটা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে 30 দিন হলে ভালো হতো।  যে যে আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে সাধারনত লোকেরা পরিচালনার অভাবে নাস্তানাবুদ হয়, সেই বিষয়কগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছি আজকের বিষয় নির্বাচনে। 
 
নবম দিন বুদ্ধিমানের সাথে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন। ক্রেডিট কার্ড ততটা খারাপ নয় যতটা বেশির ভাগ লোকই ভুলভাবে ব্যবহার করে অথবা ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করে ঋণে জর্জরিত হয়ে, ক্রেডিট কার্ডের বদনাম করেছে। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে, উল্টে দুর্দান্ত ব্যক্তিগত অর্থের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে ক্রেডিট কার্ড। যেমন জরুরী পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ তহবিলের  সরবরাহের মাধ্যম হতে পারে ক্রেডিট কার্ডগুলি। তবে মনে রাখবেন নগদ অর্থের মাধ্যম নয়। 

ক্রেডিট কার্ডে বিলডেটের পর পরই আপনি কেনাকাটা করলে 45 থেকে 52 দিন পর্যন্ত আপনার কোনও সুদ লাগবে না। তাই বিল ডেট মাথায় রেখে জিনিস কিনলে দেড় মাসের জন্য ঋণ পাচ্ছেন সুদ ছাড়া। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড থেকে নগদ অর্থ কিছুতেই তুলবেন না। যেদিন থেকে কার্ডে নগদ অর্থ তুলবেন সেদিন থেকেই কিন্তু চড়া সুদ চালু হয়ে যায়।

কোনও বড় কেনাকাটা (T.V., ফ্রীজ, এসি) ক্রেডিট কার্ডে কিনে সহজ কিস্তিতে (ই এম আই) শোধ করতে পারেন। এই সুবিধা নিতে গেলে কিন্তু আপনাকে ওই খরচটাকে ব্যাঙ্কে জানিয়ে, ঋণে পরিবর্তন করতে হবে। আপনার ক্রেডিট রেটিং ভালো থাকলে আপনাকে সুদও কম গুণতে হবে। যদিও আমার মতে ছোট ছোট আর্থিক লক্ষ্য বানিয়ে ডেট ফান্ডে SIP করুন আর লক্ষ্যপূরণ হলে কিনে ফেলুন। 

আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নগদ বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক ক্রেডিট কার্ডে আন্তর্জাতিক লেনদেনের সুবিধা থাকে। তবে বিদেশে ব্যবহার করতে হলে ওই সময়টুকুই শুধু বিদেশি মুদ্রায় কেনাকেটার জন্য খোলা রাখুন। বাকী সময় বিদেশি মুদ্রায় ব্যবহারের সুবিধা লক করে রাখুন। 

ক্রেডিট কার্ডে কেনাকেটা করলে রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায়। একেক রকমের কার্ডে রিওয়ার্ডের শর্ত একেকরকম। এরকম ক্রেতাও আছেন যাঁরা গোটা মাসের কেনাকাটা করেন ক্রেডিট কার্ডে। কিন্তু বিলের প্রদেয় তারিখের আগে সম্পূর্ণ বকেয়া অর্থ শোধ করে দেন। আর জমানো রিওয়ার্ড পয়েন্টের টাকা দিয়ে একমাসের পুরো কেনা কাটা করে ফেলেন, মানে 11 মাসের কেনাকাটার জমানো রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে 1 মাস সম্পূর্ণ ফ্রী বাজার। এটাই বুদ্ধিমানের সাশ্রয়। 

প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট প্রদেয় তারিখ থাকে। সেই তারিখ পার হলেই আপনাকে খুবই উঁচু হারে (24% থেকে 42%) সুদ প্রদান করতে হয়।  তাই ক্রেডিট কার্ডের বিল আসার পরে প্রদেয় তারিখের আগে সম্পূর্ণ বকেয়া অর্থ মিটিয়ে ফেলুন। কোনও টাকা বাকী রাখবেন না, এতে আপনার ক্রেডিট রেটিং বাড়ে অর্থাৎ ঋণের যোগ্যতা বেড়ে যায়। কম সুদে ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়ার যোগ্যতাও তৈরি হয়। এই প্রসঙ্গে মনে করাই অষ্টম দিনেই আমরা ক্রেডিট রেটিং সমন্ধে জেনেছি। 

যদি কোনও মাসে আপনার হাতে সম্পূর্ণ বিলের টাকা মেটানোর মত টাকা না থাকে, সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটাতে সংস্থাগুলি ন্যূন্যতম বিল মেটানোরও সুবিধা দেয়। পুরো টাকা মেটাতে না পারলে অন্তত সেই টাকাটুকু মিটিয়ে দিন। তা হলে বাড়তি জরিমানা গুনতে হবে না, তবে বকেয়া টাকার উপর চড়া হারের সুদটা কিন্তু গুনতেই হবে। সুদের দিন গননাও শুরু হবে আপনার কেনা-কাটার দিন থেকে। এইক্ষেত্রে বলে রাখি আপনার যদি ভুলে যাবার ভয় থাকে তাহলে অটো ডেবিটের সুবিধা নিন। নির্দিষ্ট দিনে আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে নিজে থেকেই ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট হয়ে যাবে। 

কোনও কার্ডে যদি বেশি সুদ প্রদান করছেন তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখুন অন্য কোনও ক্রেডিট কার্ডে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করার অফার আছে কিনা? থাকলে কম সুদের হারের কার্ডে ব্যালেন্স স্থানান্তর করার সুযোগ নিন। এক্ষেত্রে আমি বলব এমন পরিস্থিতি তৈরী হবার আগেই ধার শোধ করুন। 

ব্যাঙ্ক বা ক্রেডিট কার্ড সংস্থা গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট ক্রেডিট লিমিট বা কতটা পরিমাণ অর্থ খরচা  করা যাবে সেটা বেঁধে দেয়। ওই ক্রেডিট লিমিটের দিকে না তাকিয়ে নিজে একটা লিমিট বা সীমা নির্ধারন করুন। এক্ষেত্রে ক্রেডিট স্কোর ভালো রাখার সেরা উপায় হল লিমিটের 30% এর মধ্যে ব্যবহার করা। তদুপরি বলব আপনার আয়, ব্যয়, খরচের হিসেব আপনার থেকে ভাল কেউ জানে না। সেই জন্যই দ্বিতীয় দিনে বাজেট তৈরি করেছিলেন,আর তৃতীয় দিনে বাজে খরচের উপর কুঠারাঘাত কি করে করা যায় ভেবেছিলেন,তাই না। 

ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারীর শর্তাবলী সম্পর্কে সচেতন থাকুন, কারণ সেগুলি যে কোনও সময় পরিবর্তিত হতে পারে এবং আপনি কীভাবে আপনার কার্ড ব্যবহার করেন তার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে কোনদিন Statement তৈরী হচ্ছে আর কোন দিন আপনাকে বকেয়া টাকা দিতে হবে, এই দুটি তারিখ আপনার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। 

ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করার সময় আপনার প্রাথমিক শর্ত থাকবে LIFE TIME FREE কার্ড অর্থাৎ সারা জীবনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের উপর কোনদিন কোনও রকমের বার্ষিক ফি চাপাবে না ক্রেডিট কার্ড সংস্থা। এছাড়াও যেকোনো অতিরিক্ত ফি যেমন ব্যালেন্স ট্রান্সফার ফি, বিদেশী লেনদেন ফি, নগদ অগ্রিম ফি, কিছু ক্রেডিট কার্ডে কিছু লুকানো ফি থাকতে পারে, ক্রেডিট কার্ড নেবার আগে শর্তাবলী বা Fees structure সাবধানে পড়তে ভুলবেন না। এইক্ষেত্রে বলে রাখি, বিনিয়োগ হোক বা ঋণ নেওয়া, সূক্ষ্ম প্রিন্ট না পড়ে অন্ধভাবে কোনো ফর্ম বা চুক্তির সাথে জড়াবেন না। আপনি যদি না জানেন যে আপনি কী পাচ্ছেন তবে কখনই এতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। শর্তাবলী ভালভাবে বুঝুন এবং জড়িত হওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের সাথে আপনার সন্দেহগুলি পরিষ্কার করুন।

একসাথে অনেক ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করবেন না, কারণ এটি আপনার ক্রেডিট স্কোরকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

সচেতন ভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা অপরিহার্য। অর্থাৎ কার্ডের শর্তাবলীর প্রতি মনোযোগ দেওয়া, নিয়মিত অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করা, সময়মতো বিল পরিশোধ করা এবং প্ররোচনামূলক কেনাকাটা এড়ানো, একটি বাজেট থাকা, এই সমস্ত বৈশিষ্ট যদি আপনি বজায় রাখতে পারেন তাহলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি লাভবানই হবেন। 


দশম দিন : বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য কখনই টাকা ধার করবেন না। অর্থাৎ লোন against শেয়ার বা মার্জিন Funding নিয়ে বিনিয়োগ করবেন না। শেয়ার বাজার নিয়ামক সেবির দ্বারা শেয়ার বাজারের বিভিন্ন শর্তাবলীর কড়াকড়িতে শেয়ার ব্রোকার সংস্থাগুলি মার্জিন funding এ উৎসাহিত করছে তাদের ক্লায়েন্টদের। কিন্তু এইপ্রকারের অপ্রয়োজনী  ঝুঁকি নেবার কোনও যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করিনা। বিনিয়োগের জন্য টাকা ধার করা লোভনীয় হতে পারে, কিন্তু  বাজার সবসময় অপ্রত্যাশিত হয়. এবং এমনকি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্টকগুলি একটি গুজব বা বিশ্ব ইভেন্টের কারণে স্বল্পমেয়াদে পড়ে যেতে পারে যার সাথে উক্ত কোম্পানীর ব্যবসার খুব কম সম্পর্ক রয়েছে। একটি কোম্পানির স্টক মূল্য স্বল্পমেয়াদে কারোর নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তাহলে কেন আপনার ঋণ সময়মতো ফেরত দেওয়ার জন্য তাদের উপর নির্ভর করার ঝুঁকি নেবেন? উপরন্তু, স্বল্প সময়ের মধ্যে স্টক কতটা কমতে পারে তা কেউ অনুমান করতে পারে না। নিম্নমুখী হওয়ার পর, শেয়ারবাজারের লোকসান পুনরুদ্ধার করতে 3-7 বছর সময় লাগতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি অবাঞ্ছিত, কারণ বিনিয়োগ মূল্য হারালেও আপনাকে সুদের সাথে ঋণ ফেরত দিতে হবেই। ধরুন আপনি 30000/- টাকা বিনিয়োগ করেছেন এবং 100000/- টাকা ঋণ নিয়েছেন ব্রোকার সংস্থা থেকে। ধরে নিচ্ছি, প্রতিদিন কম করে 25 টাকা সুদ দিতে হয় 100000/- টাকা ঋণের জন্য। এই অবস্থাতে যদি স্টকের মূল্য প্রতিদিন কমতে থাকে, একটা নির্দিষ্ট দামের নীচে এলে কিন্তু ব্রোকার সংস্থা আপনার থেকে আবার টাকার দাবি করবে, আপনি যদি না দিতে পারেন, শেয়ারটি বিক্রি করে দেবে। তারমানে আপনার বিনিয়োগকৃত টাকাটাও ডুবে গেল। আপনি সহজেই এই সমস্ত কষ্ট এড়াতে পারেন যদি আপনি বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য টাকা ধার না করেন।

একাদশ দিন: পুরোনো জেনারেশন এর লোকের প্রচুর অর্থ ইনসিওরেন্সে নিবেশ করত। বাবা-মার নিবেশ করা অর্থ যখন রিটার্ন আসছে, সেই নিবেশের টাকার অঙ্ক দেখে আর রিটার্নের শতাংশের  হিসাব দেখে নতুন জেনারেশন হতাশা থেকে ইনসিওরেন্সের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বছরের পর বছর আমাদের দেশে বিমাকে ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে বিক্রি করা হয়েছে, সচেতনতার অভাবে মানুষ ইনসিওরেন্সকেই বিনিয়োগের মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছে। সম্পূর্ণ ভুল সঞ্চয় মাধ্যম বেছে নেবার ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হয়েছে অনেক পরিবার। তার মানে কি আমার বীমার দরকার নেই?

অবশ্যই আছে, কারণ এটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে আপনার প্রিয়জনদের রক্ষা করতে সহায়তা করে। আপনি বছরে সবমিলিয়ে যত টাকা রোজগার করেন তার 20 গুণ জীবন বীমা অবশ্যই করে রাখবেন।  কিন্তু কি বীমা কিনবেন? টার্ম পলিসি, অন্য কোনও বীমা কিনবেন না, টার্ম পলিসিতে আপনার রিটার্ন শূন্য। একদম ঠিকই পড়ছেন শূন্য, আপনার মৃত্যু অথবা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার (Rider অবশ্যই নেবেন) ক্ষেত্রে এটাই আপনার বা আপনার পরিবারের সবচেয়ে বড় বন্ধু হবে। আপনি মারা গেলে, আপনার মনোনীত বিমাকৃত টাকাটা পায়, বেঁচে থাকলে কেউ কিছু পায় না। আরে, হাস্যকরভাবে হলেও, জীবন বীমা জীবন সম্পর্কে নয়, মৃত্যু সম্পর্কে। বীমা বিনিয়োগ নয়, আপনি যখন আপনার অর্থ কোথাও বিনিয়োগ করেন, আপনি কিছু ফেরত আশা করেন।  বিশুদ্ধ মেয়াদী বীমা বা টার্ম পলিসি ক্ষেত্রে তা নয়। জীবনের বড় ঘটনাগুলির সাথে, যেমন বিয়ে করা বা সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময়  টার্ম পলিসির ভ্যালু বাড়ানো যায়, সেটাও বীমা এজেন্ট এর থেকে জেনে নেবেন। এখানে বলে রাখি, কোনও এজেন্ট টার্ম পলিসি \ মেয়াদী বীমা উল্লেখ করবে সেটা আশা করবেন না। বাজারে একটি প্রচলিত কথা আছে "জীবন বীমা কখনো কেনা হয় না, সবসময় বিক্রি হয়।" তাই আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার কেনা পলিসিটি বিক্রি হয় নি, বরং আপনি পলিসিটি স্মার্টলি কিনেছেন।

আমি মনে করি যে টার্ম পলিসি \ মেয়াদী বীমা হল জীবন বীমার সবচেয়ে বিশুদ্ধ, সস্তা এবং সেরা রূপ। কেন এই সিদ্ধান্তে আমি উপনীত হয়েছি তার একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। ধরা যাক, 30 বছর বয়সী একজন পুরুষের প্রোফাইল। ওনাকে একটি এনডাউমেন্ট বীমা পরিকল্পনা বিক্রি করা হয়েছে। যার 1 কোটি টাকার লাইফ কভার সহ ; 20 বছরের মেয়াদ; এবং 10 বছরের প্রিমিয়াম প্রদানের মেয়াদ। এখানে মৃত্যুর ঘটনাতে, সুবিধাভোগী 1 কোটি টাকার নিশ্চিত পরিমাণ পান। এছাড়াও, যদি বীমাকৃত ব্যক্তি পলিসির মেয়াদ শেষ করে থাকেন, তাহলে তিনি পলিসির মেয়াদ শেষে বিমাকৃত অর্থ এবং বোনাস পান। ইনসিওরেন্স কোম্পানি একটি সাধারণ প্রত্যাবর্তনমূলক বোনাস প্রদান করে যা সর্বনিম্ন 3 শতাংশ নিশ্চিত। যাইহোক, 20 বছরের জন্য 1 কোটি টাকার কভার পেতে ব্যক্তিকে প্রথম 10 বছরের জন্য 12,20,000 টাকা বার্ষিক প্রিমিয়াম দিতে হবে। অপরদিকে যদি তিনি একই কোম্পানি থেকে 15000 টাকার বার্ষিক প্রিমিয়াম সহ একটি 1 কোটি টাকার বেসিক টার্ম পলিসি কিনতেন, তাহলে 12,05,000 টাকার (12,20,000 বিয়োগ 15000 টাকা) ব্যালেন্স অ্যামাউন্ট বিনিয়োগ করতে পারতেন কোনও উঁচু রিটার্ন যুক্ত Assets Class-এ। ধরা যাক, তিনি একটি ফ্লেক্সিক্যাপ ফান্ডে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (SIP) এর মাধ্যমে প্রথম 10 বছরের জন্য প্রতি মাসে 1 লক্ষ  টাকা বিনিয়োগ করেছেন৷ 20 বছর শেষে, তিনি 15 কোটি থেকে 18 কোটি টাকারও বেশি উপার্জন করতেন। হ্যাঁ ঠিক তাই, ফ্লেক্সিক্যাপ ফান্ডের গত 20 বছরের বার্ষিক রিটার্নের গড় 16% থেকে 19%। এমনকি 12 শতাংশের বার্ষিক রিটার্নেও, তিনি 20 বছর পর 6.95 কোটি টাকা উপার্জন করতেন। সেখানে একটি এনডাউমেন্ট প্ল্যান তাকে মাত্র 3.15 কোটি টাকা থেকে 3.75 কোটি টাকা প্রদান করবে (1 কোটি টাকার নিশ্চিত পরিমাণ এবং 30 লাখ টাকার একটি গ্যারান্টিযুক্ত বোনাস এবং বাকি টাকার অনুমান বোনাস)। আশা করি আপনাকে বোঝাতে পারলাম বীমা এবং বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আলাদা করলে আপনি অনেক অনেক বেশি লাভবান হবেন।


আপনি টার্ম পলিসিতে খুবই কম প্রিমিয়াম দিয়ে অনেক বেশি টাকার কভারেজ পাবেন, সেখান থেকে যে প্রিমিয়াম এর টাকাটা সাশ্রয় হবে, সেটা এমন জায়গায় বিনিয়োগ করুন যার রিটার্ন মূল্যবৃদ্ধিকে অতিক্রান্ত করে আপনার মূলধন বৃদ্ধি করে।  ট্যাক্স পরিকল্পনার নামে একটার পর একটা নতুন বীমার জালে জড়াবেন না। একটু গবেষণা এবং সঠিক কর পরিকল্পনা আপনাকে বড় সঞ্চয় এবং অতিরিক্ত উপার্জনের বিষয়ে দীর্ঘ পথ নিয়ে যাবে। তাই, সর্বদা নির্ভরযোগ্য ট্যাক্স সেভিং স্কিমগুলিতে (ELSS) বিনিয়োগ করার উদ্যোগ নিন যা আপনাকে শুধু ট্যাক্স ছাড়ই দেবে না, সময়ের সাথে সাথে বড়  রিটার্নও দেবে।

এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, বীমা আপনার পরিবারের আর্থিক সুস্থতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বীমা (Health Policy) অবশ্যই অবশ্যই রাখবেন। আপনার যে কোনও বড় আর্থিক ক্ষতির রক্ষাকবচ স্বাস্থ্য বীমা। বাড়ির ক্ষতির বীমাও রাখা উচিত। আগুন, ভূমিকম্প, চুরি ইত্যাদি থেকে অনেক কম প্রিমিয়ামে আপনি আপনার বাড়িকে রক্ষা করতে পারবেন।

আমরা 11 দিনের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ের উপর অ্যাক্টিভিটি শেষ করে ফেললাম, আর মাত্র 3 দিন বাকী। আশা করছি অনেক কিছুই আর্থিক বিষয়ের বিশ্লেষণের পরে ভুল-ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছেন, যেগুলো সারিয়ে নিলে আরও ভালোভাবে সঞ্চয় করা যাবে। শেষ পর্বের লেখাটার জন্য সঙ্গে থাকুন আমাদেরপড়ুন আর শেয়ার করতে থাকুন আপনার প্রিয়জনদের। 

আমাদের এই পোস্টটি ভালো লেগেছে ? ভবিষ্যতের পোস্টগুলি মিস না করার জন্য অনুসরণ করুন । 

Disclaimer:

মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ বাজারের ঝুঁকির সাপেক্ষে, সমস্ত স্কিম সম্পর্কিত নথি সাবধানে পড়ুন। স্কিমগুলির NAVগুলি সুদের হারের ওঠানামা সহ সিকিউরিটিজ বাজারকে প্রভাবিত করে এমন কারণ এবং শক্তিগুলির উপর নির্ভর করে উপরে বা নীচে যেতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ডের অতীত কর্মক্ষমতা স্কিমগুলির ভবিষ্যত কর্মক্ষমতা নির্দেশ করে না। মিউচুয়াল ফান্ড কোনও স্কিমের অধীনে কোনও লভ্যাংশের নিশ্চয়তা বা নিশ্চয়তা দেয় না এবং এটি বিতরণযোগ্য উদ্বৃত্তের প্রাপ্যতা এবং পর্যাপ্ততার সাপেক্ষে। বিনিয়োগকারীদের প্রসপেক্টাসটি সাবধানে পর্যালোচনা করার জন্য এবং স্কিমে বিনিয়োগ/অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট আইনি, কর এবং আর্থিক প্রভাব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ পেশাদার পরামর্শ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ